বল ভেবে বােমা নিয়ে খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত এক শিশু।
আচমকা সেখানে রাখা বােমা ফেটে মৃত্যু হল আফরােজ শেখ (৭) নামে এক বালকের। গুরুতর জখম হল ইব্রাহিম শেখ নামে অপর বালক। সােমবার এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের রসিকপুর শহরে। ভােটের মুখে ওই ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতাের। শিশু মৃত্যুর এই ঘটনায় রিপাের্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।
সােমবার সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ বর্ধমান শহরের সুভাষ- পল্লির রসিকপুরে এমন মর্মান্তিক ঘটনার পরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতাের। আফরােজ স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে পড়ত। তার বাবা বাবলু শেখ একটি সংস্থার গাড়ি চালান। মা সােনিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলে “আমার ছেলে কী দোষ করেছিল? ওকে ফিরিয়ে এনে দাও!”
ইব্রাহিমের বাড়ি মেমারির বিজড়া গ্রামে। সে রসিকপুরে মামার বাড়িতে এসেছিল। তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এ ভর্তি করানাে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এলাকা দখল নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরেই প্রাণ গেল নিরীহ বালকের।
বিজেপির অভিযােগ, তৃণমূলের গােষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে। ভােটের মুখে ওই এলাকায় বােমা রাখা হয়েছিল। তা অস্বীকার করে তৃণমূলের দাবি, চক্রান্ত করে বােমা রেখেছে বিরােধীরাই।
বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সভায় এ দিন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি সঙ্গে সঙ্গে সব দেখভাল করতে খবর দিয়েছি।” নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে প্রশাসনের কাছে রিপাের্ট চাওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে প্রাথমিক রিপাের্ট কমিশনকে পাঠিয়েছে নবান্ন।
রাজ্য পুলিশের ডিজি জেলা পুলিশের কাছে বিশদ রিপাের্ট চেয়েছেন। তা এলেই কমিশনকে পাঠানাে হবে। এ দিনই নির্বাচন কমিশনের কাছে বর্ধমান, নন্দীগ্রাম ও ডােমজুড়ে হিংসার অভিযােগ জানান বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর দাবি, “বর্ধমানের ঘটনা নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা কমিশনকে জানিয়েছি। এমন চলতে থাকলে রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভােট কী ভাবে হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।” স্থানীয় সূত্রে যায়, সুভাষপল্লি চারমাথা মােড়ের কাছে একটি ক্লাবের সামনে ওই জায়গায় প্রতিদিনই এলাকার কয়েকজন বাচ্চা ছেলে এখানে খেলাধুলাে করে।
এ দিন সেখানে গাছ লাগানাের জন্য বাঁধানাে একটি জায়গা থেকে মাটি তুলছিল আফরােজ। পাশে দাঁড়িয়েছিল ইব্রাহিম। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মাটির মধ্যে প্লাস্টিকের মতাে কোনও জিনিস দেখে টান দেয় আফরােজ। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা পারুল বিবির কথায়, “পরপর দু'বার বিস্ফোরণের আওয়াজ হয়। জায়গাটা ধোঁয়ায় ভরে যায়। ভয়ে গলির ভিতরে চলে যাই!” পরিজনেরা জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতায় ক্ষত- বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল আফরােজের শরীর। পােশাক দেখে শনাক্ত করতে হয়।
পুলিশ জানায়, জেলা গােয়েন্দা দফতরের একটি দল ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালায়, তবে আর বােমা মেলেনি। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখােপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। ফরেন্সিক দলকে ডাকা হয়েছে। কী ভাবে বােমা এল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.