রায়দিঘি: কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা বাদ দিলে রায়দিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে মােটের উপর সুষ্ঠভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল।
এবারে রায়দিঘিতে প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ না ঘটলেও এবার তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পরােক্ষ ভাবে ভােটারদের জব্দ করতে টিউবওয়েলে কীটনাশক মিশিয়ে দেওয়া এবং জলের পাইপ ভেঙে দেওয়ার অভিযােগ উঠল।
ঘটনাটি ঘটেছে রায়দিঘি বিধানসভার মথুরাপুর থানার লালপুরের রানাঘাটা এলাকায়। কীটনাশক মিশ্রিত পানীয় জল খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। প্রতিবাদে এলাকাবাসী রায়দিঘি-বিষ্ণুপুর রাজ্য সড়ক অবরােধ করে বিক্ষোভ দেখাল। যদিও অভিযােগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালপুরের রানাঘাটা এলাকার অধিকাংশ ভােটারই বাম সমর্থক। তাঁদের অভিযােগ, গত পঞ্চায়েত ভােটের সময় থেকেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হুমকির ফলে ভােট দিতে পারেননি এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ভােট হয়।
আগেই এলাকায় সংযুক্ত মাের্চা সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী কান্তি গাঙ্গুলির হয়ে প্রচার করার পাশাপাশি এলাকায় ফেস্টুন, ব্যানার ও দলীয় পতাকা লাগানােয় তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতারা এলাকার বাসিন্দাদের হুমকি দিচ্ছিল বলে অভিযােগ।
এর মাঝে বুধবার রাতে এলাকার পানীয় জল সরবরাহ- কারী পিএইচই (PHE)এর পাইপ লাইন এবং বেশ কিছু টিউবওয়েল ভেঙে দিয়েছে তৃনমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এমনকি পানীয় জলের টিউবওয়েলে কীটনাশক মিশিয়েও দেওয়া হয় বলে অভিযােগ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাম সমর্থকদের অভিযােগ, রাতের অন্ধকারে তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃীরাই এই কান্ড ঘটিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল হতেই বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় বাসিন্দাদের। টিউব ওয়েলের পাশ থেকে কয়েকটি কীটনাশকের ফাঁকা বাক্স উদ্ধার হয়। কিন্তু ততক্ষণে গ্রামের অনেকেই সেই জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অজান্তে কীটনাশক মিশ্রিত পানীয় জল খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন। তড়িঘড়ি তাঁদেরকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার জেরে তীব্র জলকষ্টে ভুগছেন রানাঘাটা এলাকার মানুষ। তাঁদের কয়েক কিলােমিটার দূরের পথ অতিক্রম করে পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই বিষয়টি মথুরাপুর থানায় এবং বিডিও (BDO) কে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে সিপিএম নির্বাচন কমিশনে নালিশ করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে এবং পানীয় জলের দাবিতে রায়দিঘি দক্ষিন বিষ্ণুপুর রােডের লালপুরে রাস্তার উপর স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরােধ করেন।
মথুরাপুর থানার পুলিশ দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধের পর ঘটনাস্থলে পৌছয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ উঠে যায়।
এ বিষয়ে রায়দিঘি বিধানসভার সিপিএম প্রার্থী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, এবারের নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভােট হওয়ায় হতাশায় ভুগছে তৃণমূল দল। কারণ তারা জানে মানুষ তাদেরকে হারিয়ে দেবে। তাই রানাঘাটা এলাকায় রাতের অন্ধকারে পানীয় জলের পাইপ লাইন ভেঙে দেওয়া এবং টিউব ওয়েলে কীটনাশক মিশিয়ে দেওয়ার মত নিন্দনীয় কাজ করছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা।
দলমত নির্বিশেষে সব মানুষই তাে অসুস্থ হয়ে পড়বেন এই জল খেলে। আমি চাই প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক। তবে এ নিয়ে শাসকদল নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সিপিএম ও বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল।
রায়দিঘির তৃণমূল প্রার্থী ডঃ অলক জলদাতা বলেন, সিপিএম ও বিজেপি উদ্দেশ্য প্রনােদিত ভাবে একই সাথে এই কান্ড ঘটিয়ে মিথ্যে অভিযােগ করছে আমাদের উপর।এই এলাকায় আমাদের দলের নির্বাচিত প্রধান এবারের ভােটেও এগিয়ে থাকবে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় সিপিএম এবং বিজেপি এক সাথে মিথ্যে অপপ্রচার করে প্রচারে আসার চেষ্টা করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.