হাওড়া: উচ্চশিক্ষিত এবং ইংরেজিতে এম এ পাশ হয়েও চুরির নেশাকেই পেশা করেছিলেন এক যুবক।
বন্ধ ফ্ল্যাট বা বাড়ির দরজা ভেঙে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে গেলেও নাগাল পাচ্ছিল না পুলিশ। একটি স্কুটি নম্বরের সূত্র ধরেই পাওয়া গেল চোরের হদিস। গ্রেফতার করা হল আসানসােলের বাসিন্দা চুরি চক্রের মূল পান্ডা সৌমাল্য চৌধুরী সহ মােট তিনজনকে।
ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সােনার গহনা। গত কয়েক বছর ধরেই আসানসােল, হাওড়া, ও হুগলী জেলায় কমপক্ষে কুড়িটি চুরির ঘটনায় পুলিশ তার সন্ধান করছিল।
বাবা ছিলেন সরকারি অফিসার মা শিক্ষিকা। এমন পরিবারের সন্তান হয়েও সে চুরি বিদ্যায় পােক্ত হয়ে ওঠে। তার এই কু- কর্মের কারনে কয়েক বছর আগে আত্মঘাতী হন তার স্কুল শিক্ষিকা মা। তার প্রথম কর্মক্ষেত্র ছিল নিজের শহর আসানসােল।
এখনাে অবধি আসানসােলে তার নামে ষোলটি চুরির ঘটনার অভিযােগ দায়ের হয়ে রয়েছে। এমনকি একবার আসানসােল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কয়েক মাসের জন্য জেল খেটে ছাড়া পায় সে। সেখানকার পাট চুকিয়ে সে চলে আসে পাঁশকুড়ায়। এরপরে সে হানা দেয় হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়।
বালি থেকে সাঁকরাইল হাওড়া সিটি পুলিশের এলাকায় গত কয়েক মাসেই ছটি চুরি করে এই যুবক ও তার দুই সঙ্গী। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালােভাবে রেইকি করে, যখন বাড়িটি বা ফ্ল্যাটটি ফাঁকা থাকে সেই সময়েই হানা দিত ওই যুবক। কোন ক্ষেত্রেই পেছনে কোন সূত্র রেখে যেত না সে।
গত ৯ ই জুন সাঁকরাইলের দুইলা এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার সােনার গয়না হাতিয়ে নিয়ে যায় সে। সেই ঘটনার পরেই বাড়িতে চুরির ঘটনার অভিযােগ সাঁকরাইল থানায় দায়ের করেন অভিযান ঘােষ।
অভিযােগ করেই থেমে থাকেননি তিনি। নিজের বাড়ির চুরির বিষয়ে খোঁজ খবর করতে শুরু করেন পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী অভিযান ঘােষ। বাড়ি থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার গয়না চুরি যাওয়ার পরেই নিজেই খোঁজ খবর শুরু করে দেন।
অভিযান জানান, সেই সময়েই দুই যুবকের চেহারার বর্ননা এবং হলুদ রঙের স্কুটির বিবরন জানতে পারেন তিনি। রাস্তায় সেই রকমের একটি স্কুটি দেখে কথাও বলেন তাদের সাথে।
সেই সময়েই স্কুটির রেজিস্ট্রেশান নম্বরটি লিখে রাখেন। পরে স্কুটির নম্বরটি দিয়ে খোঁজ খবর করতে গিয়ে আসানসােলের বাসিন্দা এই ইংরেজিতে এম এ পাশ চোরের বিষয়ে সিটি পুলিশের কাছে গােটা বিষয়টি জানালে পুলিশ তাদের তদন্ত শুরু করে মূল অভিযুক্ত ও তার দুই সাকরেদকে গ্রেফতার করে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত সৌমাল্য চৌধুরী ও তার সহকারী প্রকাশ শাসমলকে। পরে তাদের জেরা করে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় মাধব সামন্তকে।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সাউথ প্রতীক্ষা ঝাড়খারিয়া জানান, এদের কাছ থেকে চোরাই জিনিসপত্র কিনত মাধব সামন্ত। এদিন সিটি পুলিশ তাদের আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.