মদ খাইয়ে অর্ধনগ্ন করে এক গরিব দলিত পরিবারের কিশােরীর ভিডিও বানিয়ে তা ভাইরাল করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের পঞ্চায়ত সদস্যা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের চাপে এবং তীব্র চাপানউতোরের পর সেই পঞ্চায়েত সদস্যা প্রতিমা সরকারকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। ধৃতের স্বামী পার্থ সরকারও তৃণমূল কর্মী। যিনি পলাতক, পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি।
এই ন্যক্কারজনক নারী নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে জলপাই- গুড়ির ধূপগুড়ির গাদং ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতে। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
কিশােরীর পড়াশােনার ব্যবস্থা করা, কন্যাশ্রী ভাতা পাওয়ার বন্দোবস্ত করা যার দায়িত্ব,সেই মহিলা শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্যা কিভাবে সেই কিশােরীকে জোর করে মদ খাইয়ে তাকে প্রায় নগ্ন করে তারপর তার ভিডিও তুলতে তার স্বামীকে সাহায্য করতে পারেন তা নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে গ্রামে, শহরে।
পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, শুক্রবার রাতে ধূপগুড়ি থানায় একটি অভিযােগ দায়ের করা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত তার স্বামী পলাতক। পকসাে আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নির্যাতিতা কিশােরীর বাবা, মা সাফাইকর্মী। খুবিই গরীব তাঁরা। তাই বাধ্য হয়েছিলেন কিশােরী তৃনমূল সদস্যার বাড়িতে কাজে যেতে।
মহিলা ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃনমূল সদস্যা। তাদের গালামালের দোকানের বিভিন্ন কাজও করত কিশোরী। গ্রামবাসীদের অভিযােগ তৃণমূল সদস্যা প্রতিমা সরকার এবং তার স্বামী পার্থ সরকার সেই মুদির দোকানে মদও বিক্রি করে।
কিছুদিন আগে সেই কিশােরী প্রতিদিনের মতাে দুপুরে তাদের বাড়ি যায়। অভিযুক্ত পার্থ সরকার ওই কিশােরীর ভিডিও করতে চায়। প্রথমে তার স্ত্রী তাকে বাধা দেয়। তারপর তারা জোর করে কিশোরীর মুখে মদ ঢেলে দেয়। কিশােরী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা তাকে মারধর করে। কিশোরীর পরনের পোশাক খুলতে বলে কিন্তু সে রাজী না হলে তাকে চড় মারা হয় বলে অভিযোগ।
অভাবের কারণে ওই পরিবারের উপর নির্ভরশীল কিশােরীকে ওই দম্পতি প্রায় নগ্ন হতে বাধ্য করে। সেই মুহূর্তের ভিডিও মােবাইলে তুলে রাখেন পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। তারা সেই ভিডিওটি বাজারে ছাড়ে। এই ভাবে তারা আগেও টাকা উপার্জন করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিও। ভিডিও ভাইরাল হতেই কিশাের,যুবকেরা উত্ত্যক্ত করতে থাকে কিশোরীকে। এসব আর সহ্য করতে না পেরে লজ্জা ও ভয়ে কার্যত নিজেকে লুকিয়ে রাখতে কখনও পড়শিদের বাড়ি, কখনও জঙ্গলে থাকতে শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি বাধ্য হয়ে হাটকমিটিতে বিষয়টি জানান।
এরপর তাদের উদ্যোগে শুক্রবার রাতে ধূপগুড়ি থানায় অভিযােগ দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মূল অভিযুক্ত তার স্বামী এখনও পলাতক।
বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কটাক্ষ, “এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গোটা রাজ্যে এই ঘটনা ঘটছে এবং বুদ্ধিজীবীরা পাঁচশো, হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছেন। তৃণমূলের কাপড় ইস্ত্রি করে পড়ে রয়েছে বুদ্ধিজীবীরা। তাই এই অসহায় কিশোরী মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায় না তাঁদের।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.