মালদা: হরিশ্চন্দ্রপুরের থানা এলাকায় বন্যার ত্রাণের টাকা নয়ছয়ের অভিযােগে গ্রেফতার হল এক তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য।
বুধবার বিকালে ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। এদিকে এই ঘটনায় বন্যাত্ৰাণ কেলেঙ্কারিতে শাসক দলের অনেক রাঘববােয়াল যুক্ত রয়েছে বলে অভিযােগ জেলা বিজেপি নেতৃত্বের।
২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হল হরিশ্চন্দপুরের বাসিন্দা তথা তৃণমূল (TMC) নেতা সামাদ শেখ। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মােবারকপুর এলাকার তার বাড়ি। তিনি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন শাসক দলের সদস্যও ছিলেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী তিনি ওই এলাকায় একটি সিএসপি (CSP) চালাতেন। তিনি এই সিএসপির মাধ্যমে প্রচুর ভুয়াে অ্যাকাউন্টে বন্যা ত্রাণের টাকা টান্সফার করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ওই এলাকার বেশ কিছু মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টেও টাকা লেনদেন করেছেন বলে অভিযােগ। এই অভিযােগের ভিত্তিতেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার জলে ভেসে গিয়েছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন অনেক মানুষ। সেই সময় বন্যার জলের দাপটে এলাকায় প্রচুর বাড়িঘর ভেঙে যায় ।
এরপরে স্থানীয় পঞ্চায়েত স্তর থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা তৈরি হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী এলাকার প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রচুর পরিমাণে টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই ত্রাণের টাকা নিয়ে চলে ব্যাপক দুর্নীতি। সেই সময় প্রচুর ভুয়াে অ্যাকাউন্টে ত্রাণের টাকা টান্সফার করা হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় একই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ত্রাণের টাকাও তােলা হয়। এমনকি মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টও ব্যবহার করা হয়।
এলাকার শাসক দলের একাংশ নেতারা এই কাজে প্রত্যক্ষ-ভাবে মদত জুগিয়েছে বলে অভিযােগ ওঠে। এমনকী, এলাকার অনেক সিএসপিকে এই দুর্নীতির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
এই নিয়ে বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের BDO অনির্বাণ বসু সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় সরকারি ত্রাণের টাকা নয়ছয়ের অভিযােগ দায়ের করেন। যদিও অভিযােগ দায়ের করার পর থেকেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশ বরুই অঞ্চলের প্রধান সােনামণি সাহাকে এখনও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি বলে খবর।
পুলিশ সূত্রে খবর তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি (IC) সঞ্জয় কুমার দাস জানিয়েছেন তার খোঁজে তল্লাশি চালানাে হচ্ছে। যদিও বিজেপি (BJP) এ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছে বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে শাসক দলের অনেক রাঘববােয়াল যুক্ত আছে।
বিজেপির মণ্ডল সভাপতি রূপেশ আগারওয়াল জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে প্রচুর টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তারা টাকায় পায়নি। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযােগ রয়েছে।
ভুয়াে অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির নামে টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই সঠিক তদন্ত করে সমস্ত দোষীদেরকে গ্রেফতার করা হােক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.