কালােজিরেতে ‘বিষ'। যে কালােজিরের ফোড়ন দিলে ইলিশ মাছের পাতলা ঝােল সুস্বাদু হয়ে ওঠে, লুচির সঙ্গে সাদা আলুর তরকারি যে কালােজিরে ফোড়ন ছাড়া প্রায় অসম্ভব, সেই কালােজিরেতেই বিপদ।
ফরেনসিকের রিপাের্ট অনুযায়ী,কলকাতার বাজারে বিক্রি হওয়া কালােজিরেতে মেশানাে হয়েছে ইঁদুরের বিষ্ঠা ও পােড়া কালাে মােবিল, যে পোড়া মোবিল গাড়ি বা যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়। এই বস্তুটি শরীরে মিশলে তার ফল যে কি ভয়ানক হতে পারে তাও পুলিশকে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার মধ্য কলকাতার পােস্তা বাজারে তল্লাশি চালিয়ে একটি ট্রাক থেকে ১৭ লক্ষ টাকার ভেজাল কালােজিরে উদ্ধার করেছেন কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখার গােয়েন্দারা যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শনিবার লালবাজারের DC বিদিশা কলিতা জানান, এই ব্যাপারে কিছুদিন আগেই জোড়াবাগান এলাকার লক্ষ্মীকান্ত সাউ নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করেই পােস্তার একটি ট্রাক থেকে ২২২ টি বস্তা এই ভেজাল কালােজিরে উদ্ধার করা হয়েছে। একেকটি বস্তার ওজন ৫০ কিলাে। মােট ১১ হাজার ১০০ কিলাে এই ভেজাল কালােজিরে উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই ভেজাল প্রাণঘাতী কালো জিরে চেনার উপায়ে পুলিশের পরামর্শ, কালােজিরে কেনার আগে ক্রেতারা যেন তা হাতে ঘষে দেখেন। হাত কালাে হয়ে গেলে বুঝতে হবে, এই কালাে-জিরেতে ভেজাল রয়েছে। এদিকে, EB-র গােয়েন্দাদের হাতে ৫৫ বস্তা ভেজাল ধনে উদ্ধার হয়েছে। চকচকে হলুদ রং করার জন্য এতে গন্ধক মেশানাে হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে। ED (Enforcement department)-র গােয়েন্দাদের কাছে গােপন সূত্রে খবর আসে উত্তর কলকাতার জোড়া-বাগানের একটি গােডাউনে বস্তাভর্তি ভেজাল কালােজিরে জড়াে করা হয়েছে। সেই সূত্র মারফত গােয়েন্দারা তল্লাশি চালিয়ে ৩৯ কিলাে ওজনের ভেজাল কালােজিরে উদ্ধার করে।
ব্যবসায়ী লক্ষ্মীকান্ত সাউ গ্রেফতার হয়। চকচকে চেহারার ওই কালােজিরে হাতে ঘষতেই কালাে রঙে ভর্তি হয়ে যায় গােয়েন্দাদের হাতের চেটো।
গন্ধটিও ছিল সন্দেহজনক। ফরেনসিক পরীক্ষায় পােড়া মােবিল ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর বিষ্ঠা নমুনা পাওয়ার পর গত দেড় মাস ধরে কলকাতায় আসা প্রত্যেকটি ট্রাককে EB-র গােয়েন্দারা পরীক্ষা করে দেখে।
শুক্রবার গভীর রাতে গােয়েন্দাদের তল্লাশিতে জানা যায় পােস্তা বাজার থেকে ধরা পড়া ট্রাকভর্তি ভেজাল কালােজিরে নদিয়ার নাজিরপুরের কাছে একটি জায়গায় তৈরি হচ্ছে ওই ভেজাল কালােজিরে। কীভাবে এই চক্রটি ইঁদুরের বিষ্ঠা সংগ্রহ করে তা কালােজিরের মধ্য মেশাত, তা জানতে নাজিরপুরে হানা দেবেন ED-র গোয়েন্দারা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.