আমাদের জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কেটে যায় অচেতন অবস্থায়।
ঘুমের সময় হৃৎপিণ্ডের গতির হার কমে আসে, মাংসপেশী শিথিল হয়, বন্ধ চোখ দুটিও বিশ্রাম পায়। শরীরের লালা, অশ্রু ইত্যাদি তৈরির কাজও তখন ধীরে চলে। সবাই এক নিয়মে ঘুমােয় না, কারও কারও ঘুমের পরিমাণ বেশ বেশি। অল্প বয়সে অনেকের আবার লম্বা ঘুমের দরকার হয়। শারীরিক ও মানসিক গঠনের কাজটি তেমন সহজ নয়, ফলে দৈনিক আট ঘণ্টার ঘুম যথেষ্ট নয় সকলের পক্ষে।
ঘুমের ধরণ :
দু-ধরনের ঘুম আছে। প্রথম ধরনের ঘুমে শরীর-বৃদ্ধির হরমােন বিকশিত হয়, নতুন কোষ গঠিত হয় এবং বাতিল হয়ে যায় অকেজো কোষগুলি । দ্বিতীয় ধরনের ঘুমে র্যাপিড আই মুভমেন্ট Rapid eye movement sleep বা আর ই এম (REM) হয়। এই সময়টি স্বপ্ন দেখার সময়। কেউ-কেউ অবশ্য বলে থাকে যে তারা স্বপ্ন দেখে না, কিন্তু কথাটি সত্যি নয়। REM-এর সময় কারও ঘুম ভাঙিয়ে দিলে স্বপ্নের কথা তার মনে পড়ে যায় পরিষ্কার । এই দু-ধরনের ঘুমেরই প্রয়ােজন হয় তােমাদের, এবং পালা করে দু-রকমের ঘুমই ঘুমিয়ে থাকো তােমরা।
নিদ্রাহীনতা :
‘ইনসমনিয়া’ (Insomnia) শব্দটি এসেছে ল্যাটিন থেকে। এটির অর্থ নিদ্রাহীনতা। অসুখটি প্রধানত বড়দের, অল্প-বয়সীরা কদাচিৎ এই অসুখে ভুগে থাকে । নিদ্রাহীনতার মূল কারণ উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা। ঘুম না এলে মানসিক এই অস্থিরতার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ঘুমের ওষুধ খেলে কষ্টের হাত থেকে অল্প কিছু দিনের জন্যে বাঁচা যায়।
প্রধান কারণ দুশ্চিন্তা বরাবরের জন্যে দূর করার চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা। আচ্ছা, এমন কি কখনও হয়েছে যে তুমি
ঘুমােতে গিয়েছ এক সমস্যা নিয়ে,কিন্তু তােমার ঘুম ভাঙল সমাধানের সূত্ৰ সমেত? প্রতিদিন আমাদের মগজে গাদাগাদা তথ্য জমা হয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মধ্যে এইসব তথ্য গুছিয়ে রাখা হয়। এই স্বপ্নেই আবার সমস্যা সমাধানের কাজ চলে, তবে সমাধানের ব্যাপারে অবচেতন মন যুক্তিবুদ্ধির তােয়াক্কা করে না, তার সম্বল বলতে স্মৃতি, কল্পনা, ধারণা ইত্যাদি।
অবচেতন মন ‘চিন্তাভাবনা করে বিভিন্ন গল্পকথা বা প্রতীকের সাহায্যে। এইসব কারণে বেশির ভাগ সময় স্বপ্নের মাথামুণ্ডু বােঝা যায় না। সচেতন মন ওই স্বপ্নকে আজগুবি বলে উড়িয়ে দিতে চায়। অবচেতন মন নিজস্ব ভঙ্গিতে সমাধানের নানা চেষ্টা করে। এই কারণেই স্বপ্নের মধ্যে বিচিত্র সব বিষয় এসে যায়। সমাধান পাওয়া গেলে অবচেতন মন নিশ্চিন্ত হয়। তবে সমস্যার সহজ সমাধান পাওয়া যায়, সব সময়।
স্বপ্ন আবার অনেক সময় দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু দুঃস্বপ্নও
সমাধানের রাস্তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করে থাকে। মৃত্যুর স্বপ্ন বিশেষ কোনও অনুভূতির মৃত্যুর প্রতীকও হতে পারে । অনেক সময় ছেলেবেলার কোনও ভীতি দুঃস্বপ্নে তাড়া করে আসে বারবার। বয়স একটু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্ম-বিশ্বাস বাড়ে ; তখন ওই দুঃস্বপ্নের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
স্বপ্নে ইচ্ছাপূরণও হয়ে থাকে। এই স্বপ্নগুলি ভারী সুন্দর । স্বপ্নে কেউ পুরস্কার পায়, কেউ গােল দেয়, কেউ বা আবার বিখ্যাত হয়ে ওঠে। দু-একটি স্বপ্ন আবার বেশ ভয়ংকর। তোমার পরিবারের কোনও সদস্য বা ঘনিষ্ঠ কোনও বন্ধুকে মারা যেতে দেখলে স্বপ্নে। কিংবা তােমার স্বপ্নে তারা হয়তাে সাঙ্ঘাতিক কোনও বিপদে পড়ল। এইসব স্বপ্ন দেখার অর্থ এই নয় যে, তুমি সত্যি-সত্যি তাদের কোনও ক্ষতি চাইছ। তাদের ওপর একটু চটেছিলে তুমি, তােমার শােধ তােলার ইচ্ছে তাই হয়তাে অস্বাভাবিক চেহারা নিয়েছে স্বপ্নে !
কেউ পুরস্কার পায়, কেউ গােল দেয়, কেউ বা আবার বিখ্যাত হয়ে ওঠে। দু-একটি স্বপ্ন আবার বেশ ভয়ংকর। তোমার পরিবারের কোনও সদস্য বা ঘনিষ্ঠ কোনও বন্ধুকে মারা যেতে দেখলে স্বপ্নে। কিংবা তােমার স্বপ্নে তারা হয়তাে সাঙ্ঘাতিক কোনও বিপদে পড়ল। এইসব স্বপ্ন দেখার অর্থ এই নয় যে, তুমি সত্যি-সত্যি তাদের কোনও ক্ষতি চাইছ। তাদের ওপর একটু চটেছিলে তুমি, তােমার শােধ তােলার ইচ্ছে তাই হয়তাে অস্বাভাবিক চেহারা নিয়েছে স্বপ্নে !
আসলে অধিকাংশ মানুষ বিখ্যাত পরিবারের সদস্যই শুধু নয়, নিজেরাও কেউকেটা হতে চায়। বিছানায় শােবার পরে বড়দের ঘুম আসতে সাধারণত মিনিট কুড়ি লেগে যায়। ছােটরা কিন্তু চটপট ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ক্লান্ত হওয়ার আগেই শুয়ে পড়ার চেষ্টা করা ভাল। ঘুমােবার আগে মজাদার কোনও বইও পড়ে নিতে পারাে কিছুক্ষণ ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.