নয়া দিল্লি : লোকসভা নির্বাচনের আগেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ (CAA) কার্যকর হবে বলে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। শনিবার তিনি বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের আগেই CAA কার্যকরের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।'
এদিন দিল্লিতে একটি বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিয়ে এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।সেইসঙ্গে শাহর সংযোজন, ‘সিএএ এই দেশের একটি আইন। তা অবশ্যই কার্যকর করা হবে। এবিষয়ে কোনও সংশয় থাকাই উচিত নয়। আমাদের মুসলিম ভাইদের সিএএ নিয়ে ভুল বোঝানো হচ্ছে এবং উসকে দেওয়া হচ্ছে। কোনও ভারতীয় নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য এই আইন আনা হয়নি। এই আইন নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে।' সিএএ নিয়ে এখনও আইনের ধারা তৈরি হয়নি বলেই তা লাগু করা যাচ্ছে না।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আইনের ধারা তৈরির জন্য ফের সময় বৃদ্ধিতে সবুজ সংকেত দিয়েছিল সংসদীয় সচিবালয়। সেই সূত্রে এই সংক্রান্ত আইনের ধারা তৈরি করে দ্রুত সিএএ কার্যকর হবে বলেই এদিন ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কেন্দ্রের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, নাগরিকত্ব যাঁরা পেতে চান, তাঁরা সহজেই যাতে আবেদন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে একটি অ্যাপ আনবে কেন্দ্র। সেই অ্যাপে আবেদন -পত্র পাঠানো যাবে। সেক্ষেত্রে কোনও রাজ্য সরকার বা
জেলাশাসকের অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না। সিএএ দেশজুড়ে কার্যকর হবে, এই দাবি বহুদিন ধরেই করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই আইন কার্যকর হয়নি। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তাই পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া অধ্যুষিত লোকসভা কেন্দ্রগুলির অন্তর্গত মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক অবিজেপি শাসিত রাজ্য স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সিএএ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করা হবে। কিন্তু নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ইতিমধ্যেই ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলেছে বলে খবর। সেক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করে নাগরিকত্ব
পেতে পারেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করা মুসলিম বাদে একাধিক ধর্মের মানুষ। আর অনলাইনে কেউ আবেদন করলে রাজ্যের ভূমিকা সেভাবে থাকবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সেক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনপত্র পাওয়ার পর সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনলাইনেই নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেবে কেন্দ্র।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বিষয়টি নিয়ে মাসখানেক আগে বলেছিলেন, একবার ধারা তৈরি হয়ে গেলে সিএএ রূপায়ণে কোনও বাধাই থাকবে না। আইনের ধারা অনুযায়ী যে বা যাঁরা যোগ্য, তাঁরা আবেদন করে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন।
গত নভেম্বরে কলকাতায় এসে ধর্মতলার সমাবেশ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, সিএএ অবশ্যই কার্যকর হবে। সেদিন তৃণমূল সরকারকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অমিত শাহকে বলতে শোনা গিয়েছিল, সিএএ গোটা দেশের আইন। বাংলার সরকার এই আইন কোনও ভাবেই রুখতে পারবে না। বাংলায় অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে তৃণমূল। তাই সিএএ কার্যকর করতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এটা দিল্লির আইন।তাই চেষ্টা করলেও এটাকে রুখতে পারবেন না। এদেশে একজন হিন্দু নাগরিকের যতটা অধিকার, শরণার্থীদের অধিকারও ঠিক ততটাই।
এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগেই সিএএ নিয়ে যদি কেন্দ্র চূড়ান্ত পদক্ষেপ করে, তবে তা নিঃসন্দেহে বিজেপির ‘মাস্টারস্ট্রোক' হিসাবেই গণ্য হবে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাস অনুযায়ী বেশ কয়েকটি লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া সমাজের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। মূলত বনগাঁ, বারাসত, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, দমদম-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক লোকসভা কেন্দ্রে বসবাসকারী মতুয়ারা তাতে নাগরিকত্ব পাবেন। সেক্ষেত্রে মতুয়া সমাজের সিংহভাগ ভোট যে বিজেপির দিকেই আসবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই আবহের মধ্যে অমিত শাহর এমন বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে
করা হচ্ছে।
সিএএ নিয়ে গত চার বছর ধরে বিতর্ক অব্যাহত। এই আইনের সাহায্যে মূলত ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান ও জৈন শরণার্থীরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু মুসলিমসহ অন্য কোনও বিদেশি শরণার্থীর জন্য সিএএ লাগু হবে না। আর সেই
তালিকায় মুসলিমদের রাখা হয়নি বলেই অবিজেপি দলগুলি সোচ্চার হয়েছে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আগে মতুয়াদের নাগরিকত্বের আশ্বাস দিয়েছিল বিজেপি। তবে এখনও পর্যন্ত এই আইন কার্যকর করা হয়নি। যে বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সমাজের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যদিও বিজেপি সবসময় দাবি করে আসছে যে, এই আইন অবশ্যই কার্যকর করা হবে। আর শাহর কথা অনুযায়ী, সেটাই এবার হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অমিত শাহ এদিন বলেছেন, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি তথা এনডিএ ফের ক্ষমতায় আসবে। চারশোর বেশি আসনে জিতে এনডিএ ক্ষমতায় আসবে বলে শাহর দাবি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.