বাঙালির কাছে আর পাঁচটা পুজোর মতো সরস্বতী পুজোর গুরুত্ব বেশ মূল্যবান। তবে এর প্রভাব বেশি দেখা যায় পড়ুয়াদের জীবনে ও বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্রে। তবে এই সরস্বতী পুজোর পরেরদিন হয় শীতল ষষ্ঠী। সাধারণত বাড়ির মেয়েরা পালন করেন শীতল ষষ্ঠী ব্রত। ওইদিন দিনভর বাড়িতে বন্ধ থাকে রান্নাবান্না। আগের রাতে রান্না করা গোটা সেদ্ধ খাওয়া হয়। কিন্তু কেন যুগের পর যুগ ধরে সরস্বতী পুজোর পরেরদিন পালন করা হয় এই শীতল ষষ্ঠী ব্রত ? কেনই বা গোটা সেদ্ধ খাওয়া হয়?
সরস্বতী পুজোর দিন সকালে গৃহস্থরা বাজারের ব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়েন। চড়া দাম হলেও বাজার থেকে বাছাই করে
গোটা সেদ্ধর সামগ্রী হিসাবে গোটা মুগ, শিষ পালং, গোটা শিম, গোটা বেগুন, গোটা কড়াইশুটি, মুগ কড়াই, ছোলা, টোপা কুল, সজনে ফুল কিনে আনেন তাঁরা। পুজো মিটে গেলে বিকেলের দিকে পরিষ্কার হাঁড়িতে শুরু হয় গোটা রান্না। কোনও সবজি না কেটেই হাঁড়িতে দিতে হয়, বলেই তা গোটা সেদ্ধ নামেই পরিচিত। হাড়িতে দেওয়া গোটা সব সবজিসেদ্ধ হয়ে গেলেই শেষ হয় রান্না। তৈরি গোটা সেদ্ধ।
কেউ কেউ অবার গোটা রান্নায় মশলা দিয়ে থাকেন। মশলা বলতে জিরেবাটা, আদাবাটা লঙ্কাবাটা ও পরিমান মতো চিনি। আবার কেউ কেউ গোটা রান্না করেন মশলা ছাড়াই।
সরস্বতী পুজোর পরেরদিন সকালে ষষ্ঠী পুজো হয় ষষ্ঠী তিথিতে। তারপর ফুল, প্রসাদ দিয়ে পুজো হয় বাড়ির শীল, নোড়ার। পুজোর সময় শীল-নোড়ার গায়ে দেওয়া হয় দইয়ের ফোঁটা। পুজো শেষে সেই দই-ই আগের দিনের রান্না করা খাবারে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এদিন কিন্তু সকাল থেকে বাড়িতে আগুন জ্বালানো হয় না। অনেকটা অরন্ধনের মতো এই পার্বণ নিয়ে সরস্বতী পুজোর পরদিন বেশ একটা অন্য আবহ তৈরি হয়। যাঁরা সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করেন, তাঁদের বাড়িতে উনুন জ্বালানোর নিয়ম নেই ।
লৌকিক আচার অনুসারে, এদিন শিল নোড়াকে বিশ্রাম দিতে হয় এবং পুজো করা হয়। তাই আগের দিনই রান্না করা হয় গোটা সেদ্ধ। মূলত ব্রত ভাঙা হয় গোটা সেদ্ধ খেয়ে।
শীত বিদায় নিচ্ছে। আসছে বসন্ত। এই সময়ে শরীরের
পক্ষেও গোটা সেদ্ধ বেশ ভাল। বিশ্বাস করা হয় যে, গোটা সেদ্ধ খেলে জীবণু সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। শীতল ষষ্ঠীর দিন ঠাণ্ডা খেতে হয়। ষষ্ঠীর দিন এই বিশেষ পদ ছয় রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা হয় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.