বহরমপুর : বুধবার বহরমপুরের সভায় এমনই হুঙ্কার দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) তবে কংগ্রেসের দাবি, বহরমপুরে টানা পাঁচবার জিতে এবার ডাবল হ্যাটট্রিকের মুখে দাঁড়িয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhuri) সেই সূত্রে রাজ্য রাজনীতিতে বহরমপুর অধীর গড় বলে পরিচিত। কিন্তু সেই মিথ এবার ভেঙে যাবে বলে নিশ্চিত শুভেন্দু। এখানে বিজেপি প্রার্থীকে চোখ করে এবার বহরমপুরে বিজয় সংকল্প যাত্রা' করল বিজেপি।
বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির উদ্যোগে বুধবার বিকেলে বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে বিশিষ্ট বিজেপি প্রার্থী ড. নির্মল কুমার সাহার (Dr. Nirmal Kumar Saha) সমর্থনে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে শুভেন্দু বলেন, ‘বাংলা, বিহার, ওড়িশা তথা গোটা দেশে সমাদৃত বহরমপুর শহর। তমলুকের মাটিতে অবসর -প্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও বহরমপুরের এই।চিকিৎসক নির্মল সাহা আমাদের সম্পদ। নির্মল সাহাকে দিল্লি পাঠিয়ে দেখুন বাকিটা ছেড়ে দিন তাঁর ওপর। যা স্বাধীনতার পরে কেউ করতে পারেননি, সেই কাজ আগামী দিনে মোদিজির সৈনিক ডাক্তার সাহেব করে দেখাবেন।
বিজেপির এটা কিছুই প্রচার নয়। পয়লা বৈশাখের পর থেকে ১১ মে পর্যন্ত যা যা করব, তাতে বিরোধী -দের ঘুম ছুটে যাবে। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। এই নির্বাচনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করব। নির্মল সাহা এই কেন্দ্রে জয়ী হবেন। মুর্শিদাবাদ জেলাতে লড়াই -টা হচ্ছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কে হবে, তা নিয়ে। এক নম্বর স্থানের জন্য কোনও লড়াই নেই। যাঁরা ভয়ে বের হতে পারবেন না, ওদের 'তৃণমূল' চোখে মারবেন, আর ভেতরে গিয়ে পদ্মে ছাপ দেবেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন যেভাবে করেছে, সেটা এই লোকসভা নির্বাচনে করতে পারবে না।প্রতি বুথে ছয় থেকে আট জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ওয়েব ক্যামেরা থাকবে, মাইক্রো অবজার্ভার থাকবে। ভোট চুরি করে নেওয়ার সুযোগ তোলামুল পার্টিকে আমরা করতে দেব না।'
তৃণমূলকে নিশানা করে শুভেন্দু আরও বলেন,'পাঁচটা আসনে জিতবে কি না ঠিক নেই, আর বলছে বাংলার মেয়েকে মুখ্যমন্ত্রী করবে। আমরা বহিরাগত বলি না। ওরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে গুজরাটি বলে। অমিত শাহজিকে গুজরাটি বলে। ওবিসি প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করা মানে সমগ্র ওবিসি সমাজকে অপমান করা। এরা বলে বিজেপি বহিরাগতদের পার্টি।
এবারে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভা নির্বাচনে লোক পাওয়া যায়নি। তাই গুজরাট থেকে ইউসুফ পাঠানকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। কীর্তি আজাদ এসেছে দিলীপদার বিরুদ্ধে। সার্টিফিকেট দিতে গেলে বাংলায় কথা বলতে পারবেন তো? তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা। আর কংগ্রেসের কথা নাই বা বললাম। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস খাতা খুলতে পারবে না। বিধানসভাতে।ওরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। আর আগামী লোকসভা ভোটে কুড়ির নীচে থাকবে কংগ্রেস। আজকে অধীর চৌধুরীর পিছনে কেন্দ্রীয় বাহিনী, আর সামনে পুলিশের স্কট। এগুলি নিয়ে ঘোরেন কার দয়াতে জানেন তো? আমাদের প্রধানমন্ত্রীর।দয়াতে। কারণ কংগ্রেসের কাছে ১০ শতাংশ সাংসদ ছিল না। বিরোধী দলের মর্যাদা কংগ্রেসের পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমাদের মোদিজি।রাজধর্ম পালন করেন। শাসকের যেমন প্রয়োজন আছে,তেমনই বিরোধীদের প্রয়োজন আছে। তাই অধীরবাবুর ফটফাটানি ভারতে বিজেপি আছে।বলে। অধীর চৌধুরীর সব ফটফটানি বন্ধ হয়ে।যাবে। আপনাদের এই সাংসদকে কোভিড মহামারির সময়ে দেখেছেন কি? কত কষ্টে ছিলেন আপনারা। অতীত কি ভুলতে পারেন আপনারা !”
কংগ্রেসের পাশাপাশি সিপিএমকেও তীব্র আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। মুর্শিদাবাদের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের উদ্দেশে তিনি বলেন, উত্তর কলকাতায় দাঁড়ান না। সেখানে সংখ্যালঘু ভোট কম। মুর্শিদাবাদ জেলাতে অনেক সংখ্যালঘু, তাই মহম্মদ সেলিম এখানে দাঁড়াচ্ছেন। ভারতীয় জনতা
পার্টি এই জিনিস করে না। সংখ্যালঘু প্রধান এই জেলা। আপনারা বলুন এর আগে এনআরসি'কে সিএএ বলে ভয় দেখানো হয়েছিল। এক মাস হল সিএএ কার্যকর হয়েছে। কার কার নাগরিকত্ব গিয়েছে? ভোটের রাজনীতি বন্ধ করুন। গুজরাটে বা মধ্যপ্রদেশে যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিকের চাকরি করেন তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিন যে, কীভাবে তাঁরা কাজ করেন। একটি স্কিম কোনও ধর্ম সম্প্রদায়ের নামে নয়, সবার জন্য, সকল ভারতবাসীর জন্য। নীতিন গড়করি করেছিলেন বলেই আজকে বহরমপুর বাইপাস তৈরি হয়েছে। অধীর চৌধুরী রেলের হাফ মন্ত্রী থাকাকালীন যে কাজ করতে পারেননি, সেই কাজ আমরা করে দেখিয়েছি। এই মুর্শিদাবাদ জেলা অবহেলিত। এই জেলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। জল জীবন মিশনের স্কিম আপনারা অনেকেই পাননি।'
বহরমপুর পুরসভার বিরুদ্ধেও সরব হন তিনি।শুভেন্দু বলেন, ‘আগে অধীর চৌধুরী একই কাজ করতেন। পার্টি অফিসে তালা খোলা থেকে ঝাড়ুদার অধীরবাবুর বাড়িতে বাজার করবে। সে পুরসভাতে চাকরি করবে। আর এখন তৃণমূল নেতারা বহরমপুর শহরটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।তৃণমূল দলের বিরুদ্ধে জোট বাঁধুন। তৃণমূলের পঞ্চায়েতগুলি চুরি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
এদিনের সভায় ব্যাপক জনসমাগম হয়। সভায় শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী গৌরীশঙ্কর ঘোষ, বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি শাখারভ সরকার প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.