ভারতীয় গবেষক নেন্সি কাগাথারাসের (Nancy Kagatharas) গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এই তথ্যটি।তিনি গবেষণা করে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবান লোকজন যদি প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যাফেইন খায় (যা কফি -তে উচ্চ পরিমাণে থাকে), তাহলে সুস্থ ব্যক্তিদেরও অচিরেই হার্টের সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা হবে। এই বিষয়টি নিয়ে কেন গবেষণা করছেন তার উত্তরে জাইডাস মেডিক্যাল কলেজ ও হসপিটাল ইন দাহোদের (গুজরাত) এই গবেষক বলেন, হাইপারটেনশনের ও হার্টের অসুখের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন ক্যাফেইন ইনটেক নিয়ে এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও গবেষণা হয়নি। এর জন্য এতদিন পর্যন্ত বয়স, জিনগত কারণ, ওবেসিটি, উচ্চ পর্যায়ে সোডিয়াম গ্রহণ ইত্যাদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর বলে মনে করা হতো। তবে এর সঙ্গে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ যোগ হয়েছে।
কয়েকেদিন আগে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দ্য আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি এশিয়া ২০২৪-এর সম্মেলনে তিনি তাঁর গবেষণাপত্রটি পড়েন। সেখানে তিনি বলেন যদি কেউ নিয়মিতভিত্তিতে ক্যাফেইন দেওয়া পানীয়, মানে চা, কফি অথবা অন্যান্য ক্যানড পানীয় খেয়ে যায় তার ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ক্যাফেইনের প্রভাবের ফলে সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টরেট বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে হার্টের বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটা বেড়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট ফেলিওর, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ ও ডিমেনশিয়া হওয়া সম্পর্কিত বলেও এই গবেষণা থেকে উঠে এসেছে। এখানে অতিরিক্ত কফি খাওয়া বলতে বোঝানো হয়েছে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশেষ করে যদি পাঁচদিনই কফি খাওয়া হয় বা ক্যাফেইনযুক্ত অন্য বেভারেজ তাহলে সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে আছে চা, কফি, কোকা- কোলা, পেপসি, রেডবুল ইত্যাদি।
সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক ও কার্ডিওলজি ও মেডিসিনের অধ্যাপক ইয়াং জানান, দীর্ঘদিন অর্থাৎ বছরের পর বছর ক্যাফেইন ইনটেক করলে কী হবে, সেই বিষয়ে এখনও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই সমীক্ষার জন্য গবেষক -রা ১৮-৪৫ বছর বয়সি ১০০ জন স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেন। তারা অংশগ্রহণকারীদের রক্তচাপ ও হার্টরেট মাপেন, সঙ্গে কতটা ক্যাফেইন প্রতিদিন খান, সেটাও দেখা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে ৯২ জন সমীক্ষাটি শেষ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৬২ শতাংশ ছিল পুরুষ, ৩০ বছরের বেশি বয়স ছিল ৬০ জনের এবং শহরাঞ্চলের বাসিন্দা ছিল ৭৯.৩ শতাংশ। এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৯.৬ শতাংশ প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন ইনটেক করেন তা জানা গিয়েছিল, মানে দিনে চার থেকে পাঁচকাপ কফি।
মহিলারা, কিংবা যেসকল ব্যক্তি ব্যবসা বা ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কাজে আছেন ও শহরাঞ্চলের বাসিন্দা তাঁরা বেশি করে ক্যাফেইন গ্রহণ করছেন বলে জানানো হয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের কখনওই ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি কফি খাওয়া চলবে না। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যাঁরা প্রতিদিন ৬০০ মিলিগ্রাম করে ক্যাফেইন ইনটেক করেছেন তাঁদের হার্টরেট বেড়ে হয়েছে প্রতি মিনিটে ১০০টি স্পন্দন আর রক্তচাপও বেশি ছিল ১৪০-৯০ প্রতি এমএমএইচজি (MMHG)-তে।
প্রতিদিনি ৬০০ মিলিগ্রাম করে কফি খেলে নানারকম সমস্যা হয়, যেমন দুশ্চিন্তা বাড়ে, ইনসোমনিয়া বা ঘুম না হওয়ার সমস্যা থাকে, হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে, পেটে অ্যাসিডিটি হয়, ঘাম ও বুক ধড়পড় করার সমস্যাও বেড়ে যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, যাঁদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল, কিংবা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে গেছে, কিংবা হার্টের কোনও ওষুধ চলছে তাঁদের ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমাণটা কমিয়ে দেওয়া উচিত। তবে একেকজনের শরীরে ক্যাফেইন একেকভাবে কাজ করে। কার শরীরে কোন জিন আছে তার উপর নির্ভর করে ক্যাফেইন কীভাবে ও কতটা ভাঙবে।
গবেষক জ্যাকুলিন হলিউডও মনে করেন, কফি খেলে একটা উত্তেজক ভাব থাকে সকলের মধ্যে, কিন্তু আদতে এটা কয়েকঘণ্টা ধরে চলতে থাকে, আর যাদের ইতিমধ্যেই হার্টের সমস্যা আছে তাদের হার্টরেট ও রক্তচাপ কফি খাওয়ার পরেই একবার দেখে নিতে পারলে ভালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.