মালদা: গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে জাল মার্কশিটের রমরমা কারবারের অভিযােগ উঠেছে।
রীতিমতাে মােটা টাকার বিনিময়ে জাল মার্কশিট দেওয়া হচ্ছে কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের বলে অভিযােগ। ২০১৯ সালে পাস আউট হওয়া এমনই কিছু ছাত্রের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে জাল মার্কশিট, আর যা নিয়ে রীতিমতাে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
পুরাে ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত অভিযােগ করেছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নােডাল অফিসার রাজীব পূততুন্ডু। তাঁর অভিযােগ, জাল মার্কশিটের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কেউ তাে অবশ্যই জড়িত রয়েছে না হলে এই কাজ কোনও ভবেই সম্ভব নয়।
এমনকী স্কলারশিপ পাওয়ার আবেদনকারীর মার্কশিট ছবির সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ছবির কোনও মিল নেই। সেখানে অন্য লােকের ছবি মিলেছে। পুরাে ঘটনায় উপাচার্যের হস্তক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নােডাল অফিসার।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তি ছেত্রী জানিয়েছেন, আমি আসার পরেই এরকম কোনও অভিযােগ পাইনি। তবে জাল মার্কশিটের বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি বিগত দিনে গঠিত হয়েছিল, সেটি এখন কি অবস্থায় রয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযােগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
একাধিক দুর্নীতির বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে অভিযােগ জানানাে হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু তারপরেও প্রয়ােজনীয় কোনাে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযােগ। আর তারপরই এখন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় জাল মার্কশিটের রমরমা কারবার নিয়ে অভিযােগ উঠতে শুরু করেছে।
অভিযােগ যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস করা প্রাক্তনীদের পিডিএফ প্রোফাইল কম্পিউটারে মজুত রয়েছে। তার পাসওয়ার্ড জেনে সেই প্রাক্তনীদের মার্কশিট কারচুপি করে জাল করা হচ্ছে।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশিটের ঘটনায় রীতিমতাে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নােডাল অফিসার রাজীব পূততুন্ডু। তাঁর অভিযােগ, টাকার বিনিময়ে জাল মার্কশিট এর রমরমা কারবার চলছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, কিছু মার্কশিট আমার হাতে এসেছে যেগুলি স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদন করা হয়েছে। সেই মার্কশিট ২০১৯ সালের।
মার্কশিটের কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশন হিসাবে যার স্বাক্ষর থাকার কথা সেই শ্যামাপ্রসাদ মণ্ডলের বদলে স্বাক্ষর রয়েছে সনাতন দাসের। অথচ সেই সময় সনাতন বাবু ওই দায়িত্বে ছিলেন না, কাজেই এখানেই বােঝা যাচ্ছে যে কিভাবে জাল মার্কশিট তৈরি হয়েছে। একটা গভীর ষড়যন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছে। যা তদন্ত করে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার রাজীব পূততুন্ডু আরও
জানিয়েছেন, স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদনপত্রের সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও’র সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট জমা দিতে হয়। কিন্তু আমার হাতে কয়েকটি মার্কশিট এসেছে যেখানে আবেদনপত্র ছাত্রের ছবি একরকম আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ছবি রয়েছে একটি বয়স্ক মানুষের।
বিষয়টি ভাবাই যায় না। এত বড় ষড়যন্ত্র কিভাবে চলছে। মালদার একটা বড় চক্র এই ঘটনার পিছনে জড়িত রয়েছে। যেখানে মােটা টাকার বিনিময়ে জাল মার্কশিটের কারচুপির কাজ চলছে। এব্যাপারে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও চক্রান্তের শিকার হতে পারেন অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় জাল মার্কশিট নিয়ে এত কিছু হওয়ার পরেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
কোনও রকম প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে না।
ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি জাল মার্কশিট হােয়াট ইজ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই নােডাল অফিসার। এমনকী, এই ঘটনার জেরে একসময় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু সেই তদন্ত এখন বিশবাঁও জলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.