নাসিকের এক প্রৌঢ়ের শরীর পরিণত হয়েছিল চুম্বকে। টিকার দ্বিতীয় ডােজ নেওয়ার পরই এমনটা নাকি হয়েছিল।
সেই খবরে আলােড়ন পড়ে গিয়েছিল গােটা দেশে। সেই খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার রাজ্যে দেখা মিলল তিন ‘ম্যাগনেট ম্যানে’র। শিলিগুড়ির পর এবার আসানসােল, নদিয়ার পলাশিপাড়া এবং বসিরহাটে খোঁজ মিলল ‘ম্যাগনেট ম্যানদের।
পিঠে, বুকে, কানের লতিতে আটকে যাচ্ছে হাতা, খুন্তি, কাঁচি, পেরেকের টুকরাে থেকে বয়ামের ধাতব ঢাকনা। যেন গায়ে আঠা লাগানাে আছে। তা নিয়ে কেউ হাঁটছেন। কেউবা কারণ জানতে হন্যে হয়ে ছুটছেন পাড়ার ডাক্তারের চেম্বারে।
এমন ভুতুড়ে কাণ্ড দেখে পড়শিরা ভ্যাবাচাকা। বাড়ির লোকের চোখ কপালে। আর যাদের সঙ্গে ঘটছে? সেই মানুষ গুলাের দাবি, “টিকা নেওয়ার পর থেকেই সারা গায়ে লােহার জিনিস -পত্র আটকে যাচ্ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে চুম্বক মানুষ।
বাংলার বাইরে দু'জনকে পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এবার শিলিগুড়ি, তেহট্ট, বসিরহাটেও পাওয়া গেল এমন তিনজনকে।
রবিবার সকালে প্রথম হইচই পড়ে যায় শিলিগুড়ির ফুলেশ্বরী এলাকায়। হাত দিয়ে ফ্রাইং প্যান ধরতে গিয়েছিলেন বছর পঞ্চাশের নেপাল চক্রবর্তী। হাতল আর ছাড়াতে পারছেন না হাত থেকে।
তার দাবি, মনে হচ্ছে হাতটা চুম্বকের তৈরি। লােহার হাতল হাত থেকে ছাড়ানাে যাচ্ছে না। তড়িঘড়ি ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নেপালবাবুকে পর্যবেক্ষণ করে জানায়, শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ। কোনও গন্ডগােল নেই।
যদিও নেপালবাবুর দাবি, “৭ জুন করােনা প্রতিষেধক টিকা নিয়েছি। ১১ জুন থেকেই গন্ডগােলের শুরু। অনুভব করছি শরীরে চুম্বকীয় শক্তি দেখা দিয়েছে।" উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সন্দীপ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, “ওই ব্যক্তির ঠিক কী কারণে এমনটা মনে হচ্ছে, সেটা জানতে মেডিক্যাল কলেজে দু দিন তাঁকে পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হয়েছে।"
এদিকে এমন আজব ঘটনা শুনে ভিড় উপচে পড়ে নেপাল বাবুর বাড়িতে। প্রত্যেকেই একবার চাক্ষুষ দেখতে চান মানুষ -কে। নেপালবাবুর পড়শী স্থানীয় বাসিন্দা অজয় দাসের কথায়, “বিষয়টা বেশ রহস্যজনক। আমরা জানতে চাই টিকা নিয়েই কি এমনটা হল।”পাছে এমন ঘটনা টিকা নেওয়ার আগ্রহ নষ্ট করে। তার জন্য নজরদারি শুরু করেছে পুলিশও।
শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের সহকারী কমিশনার জয় টুডু জানিয়েছেন, “মানুষের মনে টিকা নিয়ে বিরূপ প্রভাব তৈরি হওয়াটা কাম্য নয়। ওই ব্যক্তির উপর নজর রাখা হয়েছে।”শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘােষের কথায়, “ঘটনার রহস্য চিকিৎসকরা খুজে বের করুক। অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সামনে এলে মানুষের সুবিধা হবে।”
রবিবার যখন শিলিগুড়ির খবর ভাইরাল, তখনই আরও একজনের খোঁজ মিলেছে তেহট্টে। তেহট্টের প্রবীর মণ্ডলের দাবি, করােনা ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড নেওয়ার পর
তাঁর গায়েও তৈরি হয়েছে চৌম্বকীয় শক্তি। আটকে যাচ্ছে কয়েন, চামচ, চাবি থেকে অন্যান্য লােহার জিনিস। যা দেখতে পলাশিপাড়া থানার সাহেব নগর এলাকাতেও উপচে পড়ে ভিড়। এলাকার বাসিন্দারা দেখেন, গায়ে লেগে রয়েছে চাবির গােছা, আধুলি।
সম্প্রতি পলাশিপাড়া প্রীতিময়ী গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যিনি করােনার ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড নেন। প্রবীরবাবুর “ভ্যাকসিন নেওয়ার পর দেহে চৌম্বকীয় শক্তি তৈরি হয়েছে। গায়ে কয়েন, চামচ আটকে যাচ্ছে। সে খবর ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই ফের নতুন ম্যাগনেট ম্যান। এবার ১২৬ কিলােমিটার দূরের বসিরহাটে ম্যাগনেট ম্যান শংকর প্রামাণিকের বাড়ি বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের মামুদপুর এলাকায়।
বছর ৭৪-এর শংকরবাবুও সম্প্রতি টিকা নিয়েছেন। শংকর বাবুর দাবি, গত এপ্রিল হিঙ্গলগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ভােজ কোভিশিন্ড নেওয়ার পরেই শুরু হয়েছে এই বিপত্তি।
স্রেফ বিখ্যাত হওয়ার জন্য রটনা? নাকি সত্যিই হচ্ছে এসব? ম্যাগনেট ম্যানদের ঘিরে মানুষের কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, আদৌ এসব ঘটনার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.