এবার ভুয়া DSP-র পর্দাফাঁস টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে হােম গার্ডের নিয়ােগপত্র। জেলায় জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে জাল চক্র। - Probaho Bangla

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১

এবার ভুয়া DSP-র পর্দাফাঁস টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে হােম গার্ডের নিয়ােগপত্র। জেলায় জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে জাল চক্র।

টাকা দিলেই মিলছে হাতে হাতে রাজ্য পুলিশের হােমগার্ড এর চাকরির নিয়ােগপত্র, সঙ্গে প্যাকেটবন্দি খাকি ইউনিফর্ম, বেল্ট, জুতো ও টুপিও, সবই নকল জালি।

fraud dsp in west bengal


যে চক্র ছড়িয়ে রয়েছে কলকাতাসহ কয়েকটি জেলায় এবং যার মাথা খোদ রাজ্য পুলিশের ‘ভুয়া ডিএসপি'। অভিযােগ, চাকরি দেওয়ার নাম করে ছয় যুবকের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়েছে ওই ভুয়া পুলিশকর্তা মাসুদ রানার চক্র।


মধ্য কলকাতার বউবাজারের একটি হােটেলে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছেন লালবাজারের গােয়েন্দারা। তার আরও তিন সঙ্গী রবি মুর্মু, শুভ্র নাগ রায়, পরিতােষ বর্মনকেও আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রবি মুর্মু কলকাতা পুলিশের বরখাস্ত হওয়া একজন কনস্টেবল।

দশ বছর আগে কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দা বিভাগের গুদমন শাখায় থাকাকালীন একইভাবে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েকজন যুবককে প্রতারণা করে সে।সেই অভিযােগে কলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল এবং চাকরিও গিয়েছিল তার। বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই সে এই ধরনের নানা চক্র চালাচ্ছিল বলে ধারণা।

মাসুদ রানা ছিল তাদের মাথা। ধৃত মাসুদের কাছ থেকে রাজ্য পুলিশের ডিএসপি (DSP)-র জাল পরিচয়পত্র, হােমগার্ডে চাকরির প্রচুর নিয়ােগপত্র, জাল স্ট্যাম্প, ভুয়া নথি, খাকি উর্দি, বেল্ট, টুপি উদ্ধার হয়। পরিতােষের কাছ থেকে পাওয়া যায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

হােটেলের সামনে একটি গাড়িতে লাগানাে ছিল রাজ্য সরকারের ‘অন ডিউটি' বাের্ড ও ‘পুলিশ' লেখা স্টিকার। সেই গাড়িটিও আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তােলা হলে বিচারক তাদের ১৭ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মাসুদ রানার বাড়ি মুর্শিদাবাদের রানিতলার সােনাডাঙার কোলন রাধাকান্তপুর এলাকায়। সেখানকার হাই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশােনা তার। বাবা নিয়াজউদ্দিন শেখ বলেন,“পাঁচ বছর থেকে ছেলে বাড়িতে থাকে না। আমরা জানি কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। তবে দিন দশেক আগে বাড়িতে এসেছিল।

তার সঙ্গী রবি মালদহের গাজোলের বাগসরাইয়ের ঘাকশাল, শুভ্র উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার চন্দনপাড়া বাজার, সােনাটিকারি ও পরিতােষ মেদিনীপুরের পিংলার কৃষ্ণ প্রিয়ার খিরিন্দার বাসিন্দা। শুভ্র ও পরিতােষের মতাে আরও কয়েক -জন রয়েছে, যাদের কাজ বেকারদের পুলিশ ও হােমগার্ডের চাকরির টোপ দেওয়া।

এভাবেই মেদিনীপুরের শালবনির এক যুবক ও তার সঙ্গী মিলিয়ে মােট ছয় যুবককে ফাঁদে ফেলেছিল এই চক্রটি।
মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, ও নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় গাড়িতে পুলিশ স্টিকার লাগিয়ে ঘুরে বেড়াত মাসুদ।

রবি মুর্মু পুলিশের কায়দায় তাকে সবার সামনে স্যালুটও করত। মাসুদ নিজেকে সিআইডির ডিএসপি বলে পরিচয় দিত। তার সঙ্গী শুভ্রও নিজেকে বলত নবান্নের আধিকারিক।

চাকরিপ্রার্থী যুবকদের বােঝানাে হত, ওই পুলিশকর্তা ক্ষমতাবান। নবান্ন ও ভবানীভবনের পুলিশ ডিরেক্টরেটে ভাল যােগাযােগ থাকার কারণে পুলিশ ও হােমগার্ডে চাকরি দিতে পারে। ওই যুবকদের কাছ থেকে আগাম টাকা নেওয়া হয়। এর পর তারা কলকাতায় ডেকে পাঠায়
যুবকদের।

গত ২৯ জুন মাসুদ, রবি চাঁদনি চকের কাছে একটি।হােটেলে ওঠে। দুটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছয় জন ছিল। মাসুদ সেখানে তার মেদিনীপুরের একটি ঠিকানা দেয়। যা ভুয়া বলে সন্দেহ।

বিভিন্ন জেলার ছ' জন চাকরিপ্রার্থীকে আলাদা আলাদা দিনে ডেকে পাঠিয়ে একেকজনের কাছ থেকে নেওয়া হয় গড়ে ছ' লাখ টাকা। তাঁদের ভুয়া নিয়ােগ পত্র দেওয়া হয়। তার সঙ্গে হাতে তুলে দেওয়া হয় হােমগার্ডের খাকি উর্দি, বেল্ট, টুপি। হােটেলের ঘরে ওই উর্দি পরে দেখাতে বলা হয়।

রবি তাদের শিখিয়ে দেয়, কীভাবে স্যালুট ও প্যারেড করতে হয়। ভুয়া নিয়ােগপত্র নিয়ে চাকরিতে যােগ দিতে গেলেই ওই যুবকরা বুঝতে পারেন যে, ওই পুলিশকর্তা ভুয়া। তখনই এক যুবক বউবাজার থানায় অভিযােগ জানান। পুলিশের তল্লাশির সময় দুজন পালিয়ে যায়।

ওই চক্রে আরও কয়েকজন রয়েছে। তাদের সন্ধান চালানাে হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in the comment box.

Post Top Ad