হাড়ােয়া: হাড়ােয়া কাণ্ডের নয়া মােড়। মেছাে ভেড়ির টাকা আত্মসাৎ ও সরকারি প্রকল্পের কাটমানি (Cut Money)-র প্রতিবাদই শহিদ দিবসের দিনে ঘটা হাড়ােয়া কাণ্ডের আক্রমণের নেপথ্যের মূল কারণ।
২১ এর নির্বাচনের ফল ঘােষণার পর থেকেই হাড়ােয়া বিজেপি শূন্য, ফলে তৃণমূলের গােষ্ঠী কোন্দল দিন দিন মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে স্থানীয় মানুষদের অভিযােগ।
মেছাে ভেড়ির থেকে এলাকার ও মানুষের উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্যের টাকা, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা শতাংশ অনুপাতে কাটমানি ধার্য করে এলাকায় সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে লুটতরাজ চালাচ্ছে ভাষ্কর দাস, যােজ্ঞেশ্বর প্রামাণিক ও তাদের অনুগামীরা।
এর প্রতিবাদ করে আসছিল এলাকার বিধায়ক উষারানি মণ্ডল ঘনিষ্ঠ তৃণমূলিরা। বিধায়ক ঘনিষ্ঠদের ওপর প্রতিশােধ নেওয়ার দিন বেছে নিল ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের দিনটিকে।
প্রসঙ্গত বুধবার, বসিরহাট মহকুমা হাড়ােয়া থানার মিনাখা ব্লকের মােহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের টেংরামারী গ্রামে শহিদ দিবস ফেরত তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ভাস্কর দাস, যােজ্ঞশ্বর প্রামানিক ও তাদের অনুগামীরা।
ঘটনায় বছর ৬০ এর লদীবালা মণ্ডল ও বছর ২৫ এর সঞ্জীব জানা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হয় ১৫ থেকে ২০ জন তৃণমূলকর্মী।
এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল,গুলির খােল পড়ে আছে এলাকায়। গতকালের ঘটনার পর এখনও এলাকার পরিবেশ থমথমে রয়েছে, সঙ্গে চাপা উত্তেজনা। এলাকায় মােতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী, রয়েছে কামব্যাট
ফোর্স।
মৃতের পরিবারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে তাদেরকে হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূলের অপর গােষ্ঠী। মৃত সন্ন্যাসী জানার ভাই বাহাদুর জানা ও লদীবালা মণ্ডলের স্বামী হরেন মণ্ডলের দাবি ১,৬০০ বিঘা সরকারি খাস জমি রয়েছে তাদের এলাকায়। সেখানে মাছ চাষ হয়। তার থেকে পাওয়া অর্থ জমা পড়ার কথা মােহনপুর টেংরামারি মাভেরিক ফান্ডে। সেখানে বছরে কয়েক লক্ষ টাকার জামা পরে শুধুমাত্র গ্রামের উন্নয়ন ও রাস্তাঘাট এর জন্য সেগুলাে দীর্ঘদিন ধরে বারবার বলা সত্ত্বেও সেই টাকা আত্মসাৎ করছিল তৃণমূলের অপর গােষ্ঠী। তার প্রতিবাদ করাতেই কৌশলে এই আক্রমণ। তারা এর প্রকৃত তদন্ত দাবি করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
অভিযােগ, এলাকার রাস্তা হচ্ছিল না এবং ম্যাভেরিক একটি ফান্ড রয়েছে যেখানে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা জমা পড়ে। সেই ফান্ডের টাকা তাদের দেওয়া হয় না বরং এলাকার ওই গােষ্ঠী তাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। যেহেতু তারা আদিবাসী তার জন্য তাদেরকে সমস্ত উন্নয়ন -মূলক কাজ থেকে বঞ্চিত করছে।
তারা প্রতিবাদ করতে গেলে বারে বারে এই ধরনের সংঘর্ষ ঘটিয়ে আসছে। এটি একদিনের সমস্যা নয়,দীর্ঘদিনের সমস্যা বলে এলাকার মানুষ অভিযােগ করেছেন।
ইতিমধ্যেই ৩১ জনের বিরুদ্ধে হাড়ােয়া থানায় লিখিত অভিযােগ দায়ের হয়েছে। অভিযােগের ভিত্তিতে পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বসিরহাট মহকুমা
আদালতে তােলা হলে বিচারক তাদের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
মূল অভিযুক্ত পলাতক ভাষ্কর দাস, যােজ্ঞেশ্বর প্রামানিকের
খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূলের কোওর্ডিনেট নারায়ণ গােস্বামী জানান, দলের পক্ষ থেকে পুলিশকে বলা হয়েছে তদন্ত করে মূল
অভিযুক্তদে গ্রেফতার করতে।
ইতিমধ্যে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে। দলগত- ভাবে আমরাও খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমাদের অনুমান মেছাে -ভেড়ির দুষ্কৃতকারীদের পেছন থেকে বিজেপি ও অন্যান্য বিরােধী দল মদত দিচ্ছে। দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না বলে আশ্বাস দেন নারায়ণ গােস্বামী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.