দীপাবলির আগে চৌদ্দ রকমের শাক খাওয়ার রীতি, জানুন কোন শাকের কি গুণাগুণ। - Probaho Bangla

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১

দীপাবলির আগে চৌদ্দ রকমের শাক খাওয়ার রীতি, জানুন কোন শাকের কি গুণাগুণ।

দীপাবলির আগের দিন চোদ্দ রকমের শাক খাওয়ার সঙ্গে বিজ্ঞানের কি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। এই নিয়মের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা।

চোদ্দ শাক

কালীপুজোর আর মাত্র একদিন। কালীপুজোর আগে চতুর্দশী-তে চোদ্দ রকমের প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং চোদ্দ রকমের শাক খাওয়ার প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা, অষ্টাঙ্গ হৃদয়, ভাবপ্রকাশ সহ আয়ুর্বেদের বিভিন্ন গ্রন্থে চৌদ্দ শাকের বিশেষ বর্ণনা রয়েছে। এই রীতি যথেষ্ট স্বাস্থ্যসম্মতও বটে।



রঘুনন্দন, ষোড়শ শতাব্দীতে তাঁর অষ্টবিংশতি তত্ত্বের অন্যতম গ্রন্থ । 'কৃত্যতত্ত্ব', এ তিনি প্রাচীন স্মৃতিকথার 'নির্ণয়ামৃত'- এর মতামত অনুসরণ করে তিনি এই চোদ্দ রকমের শাকের কথা উল্লেখ করেছেন।

কোন শাকে কি গুণ :


ওল- ওলের কন্দ প্লীহা বৃদ্ধির রোগ, অর্শ, রক্ত আমাশয় ও ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিছু পাতার রস হজম-কারক ও ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে ভাল ফল দেয়। এছাড়াও জ্বর,কফ, ডায়রিয়া, আমাশয়, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, বাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, কৃমি, কুষ্ঠ, , চুলকানি ইত্যাদি রোগে ব্যবহৃত হয়।

বেতো বা বেথুয়া- এই শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ,
ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, জিঙ্ক, ফসফরাস এবং আটটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইন অ্যাসিড বর্তমান থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য, কৃমি, অম্বল, রক্তাল্পতা, মুখে ঘা, ত্বকের রোগ, বাত ও রোগ অর্শ্বরোগ প্রতিরোধে বেথুয়া খুবই কার্যকরী।

কালকাসুন্দে- কালকাসুন্দে পাতার রস জ্বর, অ্যালার্জি, কোষ্ঠকাঠিন্য, এবং ক্ষত সারাতে ব্যবহার করা হয়।

সরিষা - ভিটামিন কে, সি এবং ই এবং ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং লৌহের উৎস হল এই শাক।

নিম- নিম পাতা বা নিম পাতার রস চর্মরোগ, কুষ্ঠ ও ডায়াবেটিসের মহৌষধ।

জয়ন্তী- ডায়াবেটিস, শ্বেতী, কৃমিনাশ ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে এই শাক খুবিই কার্যকরী।

শালিঞ্চ বা শিঞ্চে- এই শাককে সঁচিসাকও বলা হয়ে থাকে। শালিকা ত্বক, চোখ, ও চুলের জন্য এই শাকা খুবই উপকারী। ডায়রিয়া, বদহজম নিরাময়ে এই শাক খেলে উপকার পাওয়া যায়। এই শাক খেলে মায়ের স্তন্যদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে।

গুলঞ্চ- ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, যক্ষ্মা বাত, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যাদির আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহার করা হয়। এই শাক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

পটলপত্র- এই পাতা রক্তবর্ধক ও রক্তশােধক হিসাবে এবং লিভার ও চর্মরােগ সারাতে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ এই কমাতে ব্যবহৃত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে, ক্ষুধা ও হজমশক্তি বাড়ায়।

শেলুকা - একটি কাঁচা উদ্ভিদ এবং বীজ মসলা হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। আর পাতার ডগা সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃতে সালফাকে সেন্টিপিড বলা হয়।

ঔষধিগুণ: মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে এবং শিশুদের পেটের রোগ সারাতে এই গুলফা শাক খুবিই উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই গুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রােগ, চোখে ঘা, পুরানাে ক্ষত ইত্যাদি রােগ উপশমে এই শুলফা শাক খুবই উপকার।

হিঞ্চে-হেলেঞ্চাকে ক্ষুধাবর্ধক, পিত্তনাশক ও রক্তশােধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত খেলে রক্তে হিমােগ্লাবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় এর রােগ প্রতিরােধী ভূমিকা রয়েছে যথেষ্ট। মাথার যন্ত্রণায় এই শাক বেটে মাথায় লাগালে যন্ত্রণা কমে। নিয়মিত ধরে খেলে ব্লাড সুগার কমে।

ঘেঁটু/ঘণ্টাকর্ণ- এর পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভােনয়েড থাকে। চুল পড়া, চর্মরােগ, জ্বর, বাত, কফ হাঁপানি লিভারের রােগ, প্রভৃতি রােগ প্রতিরােধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকরী। এমনকি ঘেঁটু পাতা বেটে ক্ষত বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি উপশম হয়।

শুষনি- এর বিজ্ঞানসম্মত নাম কোয়াড্রিফোলিয়া বা মাসিলি মিনুটা। ভারতসহ দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, চিন, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরােপে শুষনি শাক ও ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে সুপরিচিত।

নিদ্রাহীনতায় যারা ভােগেন তারা নিয়মিত শুষনি শাক খেলে উপকৃত হবে। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন,
বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরােগ ইত্যদি দূর হয়।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে উল্লিখিত সব শাকই পাওয়া যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in the comment box.

Post Top Ad