দীপাবলির মুখেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সােনারপুরের সুভাষ-গ্রাম থেকে গ্রেফতার হল জঙ্গি সংগঠন জামাত উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (JMB)-র সদস্য।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুভাষগ্রামের সর্দারপাড়ার একটি বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে আবদুল মান্নান নামে ওই জেএমবি (JMB) জঙ্গিকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ (NIA)।
মালয়েশিয়া থেকে চোরাপথে কয়েক বছর আগে ভারতে ঢুকে এই জায়গায় আশ্রয় নেয় ওই জঙ্গি। আবদুল মান্নান আসলে বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা।
দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর এলাকা থেকে গত জুলাই মাসে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেফতার হয় তিন JMB জঙ্গি নাজিউর রহমান পাভেল ওরফে জয়রাম ব্যাপারী ওরফে জোসেফ, মেকাইল খান ওরফে শেখ সাব্বির ও রবিউল ইসলাম।
তিনজনই জঙ্গিই বাংলাদেশের গােপালগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ'-এর অপসারিত জওয়ান নাজিউর রহমান পাভেল বাংলাদেশের জেএমবি নেতা আল আমিনের ভায়রাভাই। আল আমিন বর্তমানে জেলে। এর পরও বারাসত থেকে জেএমবির লিঙ্কম্যান রাহুল সেন ওরফে লালুকেও গ্রেফতার করে এসটিএফ।
সম্প্রতি NIA প্রথম তিনজনকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তাদেরকে জেরা করেই আব্দুল মান্নানের হদিশ মেলে। দীপাবলির আগে রাজ্যে তার কোনও নাশকতার ছক ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গােয়েন্দাদের দাবি, মূলত JMB-র লিঙ্কম্যান হিসাবেই কাজ করত মান্নান। এমনকি ধৃত বাংলাদেশি জঙ্গিদের জন্য ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল সে। যদিও মান্নান নতুন করে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নতুন মডিউল তৈরি করে জঙ্গি সদস্য নিয়ােগ ও তহবিল বৃদ্ধির কাজ শুরু করেছিল কি না, গােয়েন্দারা তা জানার চেষ্টা করছেন। এমনকী, জঙ্গি সংগঠনের তহবিল বৃদ্ধির জন্য সে লুঠপাটের ছকও কষেছিল, এমন সম্ভাবনাও গােয়ন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
বুধবার ধৃতকে ব্যাঙ্কশালে NIA আদালতে তােলা হলে তাকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত NIA হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। দীপাবলির আগে রাজ্যে তার কোনও নাশকতার ছক ছিল কিনা,তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।
গােয়েন্দা সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের এক JMB নেতা হৃদয়ের ঘনিষ্ঠ ছিল মান্নান। হৃদয় হল আল আমিন মডিউলের মাথা। বরিশালেই হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আবদুল মান্নানের মগজধােলাই শুরু হয়। এরপর হৃদয়ের পরামর্শে শ্রমিক সেজে মালয়েশিয়ায় যায় সে। সেখানেও গিয়েও অন্য শ্রমিকদের মগজধােলাই শুরু করে সে ও জঙ্গি সংগঠনের জন্য তহবিল বৃদ্ধির চেষ্টা করে।
সেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক বাসিন্দার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তার মাধ্যমেই বছর পাঁচেক আগে ওই জেলায় চলে আসে সে। যে বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছে, সেখানে বছর দুয়েক ধরে থাকত সে।
তার বিরুদ্ধে কয়েনের কারবারির অভিযোগ ছিল। এক টাকা ও দু'টাকার কয়েন জোগাড় করত সে। সেই কয়েন বাংলাদেশের ব্লেডের কারখানায় পাচার করত। সেই কয়েন গলিয়ে তৈরি হত ব্লেড। সেইসঙ্গে জাল ভােটার কার্ড, আধার কার্ডও তৈরি করাত সে। নিজের জাল পরিচয়-পত্রও তৈরি করেছিল সে।
গত এপ্রিল মাস নাগাদ JMB জঙ্গি হৃদয় চোরা পথে বারাসতে এসে রাহুল সেনের বাড়িতে ওঠে। ওই সময় আবদুল মান্নানের সঙ্গে যােগাযােগ করে হৃদয়। তাকে বলে, বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আসছে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সেইমতাে হরিদেব-পুরের বাসিন্দা জেএমবির লিঙ্কম্যান সেলিম মুনশি ও শাকিলকে মান্নান সেই ভার দেয়।
এতদিন সে কোথায় গা ঢাকা দিয়েছিল, লুকিয়ে থাকার সময় কেউ তাকে সাহায্য করত কিনা, ধৃত JMB জঙ্গিকে জেরা করে সে সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে বলেই আশা তদন্তকারীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.