২০২০ সালের দিল্লির জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন হিন্দু খুন হয়েছিল। তদন্ত সংস্থার মতে এতে ইসলামিক স্টেটের হাত আছে। আইসিস জঙ্গি আরশাদ ওয়ারসি ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (AMU) ওয়াজিহুদ্দিন আলি খানের গ্রেফতার এবং শারজিল ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে তা স্পষ্ট হয়।
৭ নভেম্বর, ২০২০ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের 'অ্যান্টি টেরোরিজম স্কোয়াড' (ATS) ছত্তিশগড়ের দুর্গ থেকে ওয়াজিহুদ্দিন আলি খানকে গ্রেফতার করেছিল। সে মূলত সেখানকারই বাসিন্দা,তবে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি (PHD) করছে। সে সেখানে সমাজ বিজ্ঞান পড়াতো, হিন্দু ছাত্রও ছিল তার। তার মতের অনুসারীদের কাছে সে 'আমির' (রাজা) নামে পরিচিত এবং ভারতের ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড়। গ্রেফতারের পরে তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে লখনউ নিয়ে যাওয়া হয়।
নভেম্বর,২০২৩-এর দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে AMU সহযোগী আইসিস (ISIS) জঙ্গি আবদুল্লা আরশালান এবং মাজ বিন তারিককেও ATS গ্রেফতার করেছে। তিনজনই পুনে ISIS নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটিএস আরশালান ও তারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে ওয়াজিহুদ্দিনের নাম উঠে আসে। এটিএস বলেছে, ওয়াজিহুদ্দিন আইসিস হ্যান্ডলার ছিল এবং সেই
উত্তরপ্রদেশে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিল। সে মুসলমান যুবকদের জিহাদ চালানোর প্রশিক্ষণ এবং আইসিসে নিয়োগ করত। ওয়াজিহুদ্দিনই মাস্টারমাইন্ড ছিল, সেই আরশালান (পেট্রোলিয়াম ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার) ও তারিককে (B.COM)) ISIS জঙ্গি হিসেবে নিয়োগ করেছিল।
ATS প্রেস রিলিজ স্পষ্ট উল্লেখ করেছে যে, বছরের শুরুতে পুনে আইসিস মডিউলে গ্রেফতার হওয়া শাহনওয়াজ ও রিজওয়ান জেহাদি 'আমু'র ছাত্র সংগঠনের ঘনিষ্ঠ ছিল। তারাই সেই আইসিস জঙ্গি যারা আমু থেকে অন্যান্য ISIS জঙ্গিদের রিক্রুট করেছিল।
ওয়াজিহুদ্দিন এবং গ্রেফতার হওয়া অন্যদের থেকে প্রচার-পত্র উদ্ধার হয়েছে। তারা এই প্রচারপত্র একে অপরের সঙ্গে এবং অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে চালাচালি করত।
প্রসঙ্গত, ৩ অক্টোবর শাহনওয়াজ, রিজওয়ান ও আরশাদ ওয়ারসি পুনে আইসিস মডিউলে গ্রেফতার হয়েছিল, শাহনওয়াজ ওরফে শফিউজ্জামাকে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল রাজধানীর এক আস্তানা থেকে গ্রেফতার করেছিল। তারা অযোধ্যা, অক্ষরধাম মন্দির এবং চাবার হাউসে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিল।
প্রধান অভিযুক্ত শাহনওয়াজের মাথার দাম ছিল ৩ লক্ষ টাকা। NIA শাহনওয়াজের কাছ থেকে আইইডি (IED) তৈরির রাসায়নিক ও অন্যান্য অপরাধমূলক উপাদান উদ্ধার করেছে।
হাজি আলিআবদুল্লা ফাইয়াজ শেখ ওরফে ডায়াপারওয়ালা এবং তালহা লিয়াকত খান নামে আরও তিন সন্দেহভাজন জঙ্গির প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্যের জন্য NIA শাহনওয়াজ, রিজওয়ান আবদুলকে গ্রেপ্তারের ৩ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শাহনওয়াজ, আবদুল্লা, রিজওয়ান অ্যাপের মাধ্যমে ইসলামিক স্টেট মিশনে যোগদানের জন্য উগ্রপন্থী হয়েছিল এবং দেশে সন্ত্রাস চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।
পুলিশ জানিয়েছে শাহনওয়াজ আলম (৩১) হাজারিবাগের মোহাম্মদ রিজওয়ান আশরাফ (২৮) লখনউয়ের এবং মহম্মদ আরশাদ ওয়ারসি ঝাড়খণ্ডের গাড়োয়ার জেলার বাসিন্দা। রিজওয়ান আশরাফকে লখনউ থেকে শাহনওয়াজকে জৈতপুর থেকে এবং ওয়ারসিকে মোরাদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শাহনওয়াজের কাছ থেকে লোহার পাইপ, কেমিক্যাল, টাইম ডিভাইস, পিস্তল কার্তুজ সহ বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত অন্যন্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া তিন সন্ত্রাসীর কার্যকলাপ পরিচালনা করছে পাক আইএসআই (ISI) এবং আইসিস(ISIS)।পুলিশ জানিয়েছে যে তিন জঙ্গি আইসিসের প্রতি অনুগত এবং তাদের পাকিস্তানি ISI হ্যান্ডলারদের ও আইসিসের সঙ্গে সংযোগ ছিল। আইসিস পিছন থেকে কাজ করেছিল যাতে তারা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে না আসে।
শাহনওয়াজ ২০১৬-এ দিল্লি এসেছিল। সে শাহিনবাগে যায় র্যাডিক্যাল ইসলামিক গ্রুপ হিজবুত তাহরির বক্তৃতা শুনতে। শাহিনবাগে থাকাকালীনই সে আইসিসের প্রতি আকর্ষিত হয়। এ সময় রিজওয়ানের সঙ্গে শাহনওয়াজের পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। দুজনই ইসলামিক স্টেটে বা আইসিস দ্বারা প্রভাবিত ছিল। মজার বিষয়, আরশাদ ওয়ারসিও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি-টেক (B-TECH) শেষ করার পরে ২০১৬ সালে দিল্লি এসেছিল। বর্তমানে সে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে পিএইচডি (PHD) করছে। সে শাহনওয়াজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল। ওয়ারসি জামিয়া নগরে থাকত। তারা শাহিনবাগেও উগ্র ইসলামিক কর্মসূচিতে ছিল। 'মোস্ট ওয়ান্টেড' শাহনওয়াজ -কে আশ্রয় দিয়েছিল এই আরশাদ ওয়ারসি। ওয়ারসি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িত ছিল। ওয়ারসি- কে জেরা করে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল শাহনওয়াজ- কে সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
আরশাদ ওয়ারসি অন্যান্য আইসিস সন্ত্রাসীদের সঙ্গে দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনার জন্য গ্রেফতার হয়েছে, সে দিল্লির হিন্দুদের ওপর হামলায়ও জড়িত ছিল। প্রকৃতপক্ষে, শারজিল ইমামের সঙ্গে আরশাদ ওয়ারসি সহিংসতার বীজ রোপণ করেছিল যা থেকে ২০২০ সালে দিল্লির হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box.